বিশ্ব

তেহরানে ভয়াবহ হামলা চালাল ইসরায়েল: উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্য

ইরানের রাজধানী তেহরানে মধ্যরাতে ইসরায়েলের বিস্ফোরক হামলা

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে। শুক্রবার ভোররাতে ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে সরাসরি আকাশপথে বোমাবর্ষণ করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলো এই খবর নিশ্চিত করেছে।

হামলায় মূলত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (IRGC) সদর দপ্তর ও নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানা হয়েছে। নাতানজ হচ্ছে ইরানের অন্যতম গোপন ও গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক গবেষণা ও সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে বলে দাবি করেছে ইরানি টেলিভিশন

কী বলছে ইসরায়েল?

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, এটি একটি “আগাম প্রতিরোধমূলক হামলা” যা ইরানের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার প্রতিরোধে চালানো হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন এবং সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে চায়।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন বিবৃতিতে বলেন:

“ইরানের হুমকি যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ আমাদের অভিযান চলবে। এই যুদ্ধ আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই।”

তিনি আরও জানান, ইসরায়েলের গোটা দেশে বিশেষ জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল তেহরান

ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম এবং ফার্স নিউজ জানিয়েছে, ভোররাত ৪টার পর থেকে তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় ৬ থেকে ৯টি বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। অনেক আবাসিক ভবনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

তেহরানের ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাতিল হয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব উড়োজাহাজের ওঠানামা।

আল-জাজিরা ও বিবিসির প্রতিবেদন

আল–জাজিরা জানায়, তেহরানের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে একাধিক ভারী বোমার বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে। তারা আরও জানায়, নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনাকে কেন্দ্র করে প্রবল ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও আগুন দেখা গেছে।

বিবিসি-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের আকাশসীমায় ঢুকে অত্যন্ত নির্ভুলভাবে টার্গেট করা স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।

ইরানের অবস্থান

ইরানের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বড় ধরনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে ইরানি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, “ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব খুব শিগগিরই দেওয়া হবে।”

এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন বলে জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দ্রুত বিবৃতি দিয়ে বলেন:

“ইসরায়েলের অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত নয়। আমাদের একমাত্র অগ্রাধিকার হলো—মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”

তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে মার্কিন দ্বন্দ্ব বর্তমানে কূটনৈতিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রাখতে চায় ওয়াশিংটন।

কেন এই হামলা?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অগ্রগতি এবং ইসরায়েলের ওপর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি এ উত্তেজনার মূল কারণ। সাম্প্রতিক সময়ে ইরান সিরিয়া, লেবানন এবং ইয়েমেনে তাদের সমর্থিত গোষ্ঠীর মাধ্যমে ইসরায়েলবিরোধী কার্যক্রম বাড়িয়েছে। তেলআবিব বারবার অভিযোগ করে আসছে যে, ইরান পরোক্ষভাবে হামাস, হিজবুল্লাহ এবং হুতিদের অস্ত্র সহায়তা দিয়ে অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা তৈরি করছে।

যুদ্ধের আশঙ্কা: কি হতে পারে পরবর্তী ধাপ?

এই হামলার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। বিশেষ করে যদি ইরান সরাসরি ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রতিশোধমূলক হামলা করে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো ইতোমধ্যেই উভয় পক্ষকে আত্মসংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

  • ফ্রান্স: ইসরায়েলকে সামরিক অভিযানে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে।
  • রাশিয়া: পরিস্থিতিকে “অত্যন্ত উদ্বেগজনক” উল্লেখ করে জরুরি বৈঠক ডেকেছে।
  • চীন: পারমাণবিক স্থাপনায় হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে নিন্দা জানিয়েছে।

একটি নতুন যুদ্ধের সূচনা?

বিশ্বজুড়ে এই হামলার পর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পেট্রোলের দাম বেড়ে গেছে আন্তর্জাতিক বাজারে। বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে ২০২৫ সাল একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের বছর হয়ে উঠতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button