খেলাফুটবল

কিউবা মিচেলকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার ছাড়পত্র দিলো ফিফা

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন এখন আর কল্পনা নয়, বরং বাস্তবের মুখ দেখছে ইংল্যান্ড প্রবাসী তরুণ ফুটবলার কিউবা মিচেল। ইতোমধ্যেই তিনি বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেয়েছেন এবং এবার আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা থেকেও পেয়েছেন বহুল প্রতীক্ষিত ছাড়পত্র। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচে মাঠে নামার সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো এই প্রতিভাবান ফরোয়ার্ডের।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সূত্রে জানা গেছে, ৩ জুন দিবাগত রাতে ফিফার পক্ষ থেকে কিউবা মিচেলের ছাড়পত্র এসে পৌঁছায়। ফলে কাগজপত্রের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় এখন কেবল জাতীয় দলের চূড়ান্ত দলে তার ডাক পাওয়ার অপেক্ষা।

পাসপোর্ট থেকে ফিফা ছাড়পত্র—দ্রুত গতির পথচলা

মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে এক দৃষ্টান্তমূলক গতিতে সম্পন্ন হয়েছে কিউবার নাগরিকত্ব ও আন্তর্জাতিক খেলার উপযোগিতা। ২৭ মে বার্মিংহামে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন কিউবা মিচেল। তারপরে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি পাসপোর্ট হাতে পান, যা বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও ক্রীড়া প্রশাসনের দ্রুততা ও আন্তরিকতার একটি ইতিবাচক উদাহরণ।

এরপর ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার প্রক্রিয়া সফলভাবে শেষ করেন মিচেল। সবশেষে, ফিফার অনুমোদন পাওয়ার মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত হয় তার জাতীয় দলের জন্য খেলার যোগ্যতা।

এশিয়ান কাপে খেলা হচ্ছে না

এত দ্রুত ছাড়পত্র পেলেও, ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দেখা যাবে না কিউবা মিচেলকে। কারণ, প্লেয়ার রেজিস্ট্রেশনের সময় ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে এই ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ নেই তার।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে) তাকে কেন্দ্র করে তড়িঘড়ি কোনো সিদ্ধান্তে যেতে চায়নি। ভুটান ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ২৪ সদস্যের স্কোয়াড আগেই ঘোষণা করেছে তারা। এই স্কোয়াডে মিচেলের নাম না থাকায় অন্তত অক্টোবর পর্যন্ত লাল-সবুজের জার্সিতে তার অভিষেক পিছিয়ে যাচ্ছে।

কোচ কাবরেরার উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ

জাতীয় দলে কিউবার অন্তর্ভুক্তি এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ হাভিয়ের কাবরেরার ওপর। তরুণ হলেও কিউবা মিচেলের ট্যাকটিক্যাল দক্ষতা, ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা ফুটবল শৈলী এবং তার ফিজিক্যাল ফিটনেস—সবকিছু মিলিয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলে বড় ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

কোচ কাবরেরা একাধিকবার বলেছেন, বিদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের দলে যুক্ত করার সময় তিনি খুব সতর্ক থাকেন এবং তারা আদৌ বাংলাদেশের কৌশলগত পরিকল্পনায় ফিট হন কিনা, তা পর্যালোচনা করেন। কিউবার ক্ষেত্রেও বিষয়টি ভিন্ন হবে না। তবে ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছেন, মিচেল যদি ট্রেনিং সেশনে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করতে পারেন, তবে শিগগিরই বাংলাদেশ দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে উঠবেন তিনি।

বাংলাদেশ ফুটবলে নতুন সম্ভাবনা

বিদেশে বেড়ে ওঠা ফুটবলারদের জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্তি বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগে জামাল ভূঁইয়া, তারিক রায়হান কাজীসহ একাধিক খেলোয়াড় বিদেশে গড়ে উঠেও লাল-সবুজের পতাকাকে গর্বের সাথে ধারণ করেছেন। কিউবা মিচেলও সেই ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করছে বাফুফে।

তবে শুধু মাঠে নামলেই চলবে না, দরকার ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং দলের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা। সেদিক থেকে দেখা যাচ্ছে, কিউবা মিচেলকে সময় দিয়ে তৈরি করতে চাইছে বাফুফে। দীর্ঘমেয়াদে তাকে জাতীয় দলের মূল কৌশলগত প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।

কিউবা মিচেল কে?

২০ বছর বয়সী কিউবা মিচেল ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় ক্লাব ফুটবলের মাধ্যমে তিনি ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং পরে বিভিন্ন ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে অংশ নেন। তার খেলার ধরন আক্রমণাত্মক, গতিময় এবং টেকনিক্যালি দক্ষ। উইঙ্গার কিংবা সেন্টার ফরোয়ার্ড—উভয় পজিশনেই সাবলীল তিনি।

তার পারিবারিক শিকড় বাংলাদেশের মাটিতে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার সুযোগ পান। বিষয়টি মাথায় রেখেই জাতীয় দলে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেন মিচেল।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য ও সম্ভাবনা

ফিফার ছাড়পত্র প্রাপ্তি কেবল একটি সূচনা। এরপরে জাতীয় দলে পারফর্ম করা, দলের মধ্যে জায়গা করে নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক মানের ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করাই হবে কিউবার মূল চ্যালেঞ্জ। তবে এখনই বাংলাদেশ ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে তাকে ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই।

কিউবা মিচেল নিজেও বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। ভবিষ্যতে দেশের হয়ে এশিয়ান কাপ, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব বা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার লক্ষ্য তার।

উপসংহার:
কিউবা মিচেলের ফিফা ছাড়পত্র প্রাপ্তি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ফুটবলে একটি ইতিবাচক এবং উৎসাহব্যঞ্জক ঘটনা। তার অন্তর্ভুক্তি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে জাতীয় দলের আক্রমণভাগে। এখন অপেক্ষা, কবে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন তিনি, আর জাতীয় দলের হয়ে নিজেকে কতটা প্রমাণ করতে পারবেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button