বিনোদন

শাকিব খানের মায়ের প্রথম সাক্ষাৎকার: “সবচেয়ে গর্বিত হই

প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন শাকিব খানের মা রেজিয়া বেগম। জানালেন ছেলের ছোটবেলার গল্প, প্রথম স্কুলজীবন, অভিনয়ে আসার কাহিনি, সংসার-ভালোবাসা ও তারকা জীবনের অন্তরালের দিক। পড়ে জানুন কিং খানের মায়ের চোখে ‘মাসুদ’ কেমন!

বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের সুপারস্টার শাকিব খান, যিনি কিং খান নামে পরিচিত, তাঁকে ঘিরে সবসময়ই জনসাধারণের কৌতূহলের কমতি নেই। তবে তাঁর পরিবারের সদস্যরা সবসময় থেকেছেন প্রচারের বাইরে। এবার প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এলেন শাকিব খানের মা রেজিয়া বেগম। প্রথম আলোর বিশেষ অনুরোধে ছেলেকে নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।

ছোটবেলার ‘মাসুদ’: পড়ুয়া ও শান্তশিষ্ট ছেলে

রেজিয়া বেগম জানান, শাকিব ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল। বিশেষ করে গণিতে ছিল তার বেশি আগ্রহ। গানবাজনা ও নাটকে অংশ নিলেও পড়াশোনায় ছিল বেশ সিরিয়াস। ধানমন্ডির ১৫ নম্বর এলাকায় একটি স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিন থেকেই ছিল অসম্ভব উচ্ছ্বসিত। নিজের ব্যাগ নিজেই গুছিয়ে নিয়েছিল আগের রাতেই।

খেলাধুলার দিকেও ছিল প্রচণ্ড ঝোঁক। ক্রিকেট খেলার প্রতি ছিল আলাদা টান। পাশাপাশি ঘুড়ি ওড়ানো ছিল প্রিয় শখ।

অভিনয়ে আসার গল্প: তিন মাসের প্রতিশ্রুতি, ২৫ বছরের পথচলা

শাকিবের তারকা হওয়ার গল্পটা আকস্মিকভাবেই শুরু। রেজিয়া বেগম বলেন, “কলেজে পড়ার সময় সামার ভ্যাকেশনে হঠাৎ একদিন এসে বলল, সিনেমায় কাজ করতে চায়। আমরা রাজি ছিলাম না, কারণ ও পড়াশোনায় ভালো ছিল। ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছাও ছিল। কিন্তু বলল, ‘মাত্র তিন মাস অভিনয় করব।’ সেই তিন মাস এখন ২৫ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে।”

পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও ছেলের আগ্রহের কাছে হার মানতে হয়। “সে অভিনয়ে আনন্দ পাচ্ছিল, আমরাও তার আনন্দে আনন্দ খুঁজে নিয়েছি,” বলেন রেজিয়া বেগম।

কঠিন সময় পেরিয়ে প্রতিষ্ঠা

অভিনয়ে শুরুতে সহজ ছিল না শাকিবের পথচলা। সাফল্য আসতে সময় লেগেছে। মা বলেন, “প্রথম কয়েক বছর সে খুব একটা সফলতা পায়নি। খাবার টেবিলে এসব নিয়ে কথা হতো। মাঝে মাঝে বলত, অন্য কিছু করবে কি না। কিন্তু ওর আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল। বলত, অভিনয়ে ভালো কিছু করবই।” অবশেষে সেই বিশ্বাসই বাস্তবতায় রূপ নেয়।

ছেলের বড় হয়ে ওঠা দেখে কেমন লাগে?

“টেলিভিশন ও পত্রিকায় ওকে নিয়ে যখন ভালো কথা শুনি, আত্মীয়-স্বজন গর্ব করে, তখন বুঝতে পারি, ছেলে বড় কিছু হয়ে গেছে। তবে আমার কাছে সে আজীবনই ‘মাসুদ’,” বলেন মা।

সবচেয়ে বড় গুণ ও দুর্বলতা

“সে খুব ভালো মনের মানুষ। কারও অমঙ্গল চায় না, মানুষকে চুপিচুপি সাহায্য করে। ছোটবেলা থেকেই মানুষের জন্য মায়া-মমতা ছিল,” বলেন রেজিয়া বেগম। তবে একইসঙ্গে এটাকেই দুর্বলতা মনে করেন তিনি। “সবাইকে বেশি বিশ্বাস করে, আর সেখানেই ঠকে গেছে অনেকবার,” বলেন তিনি।

শাকিব খুব চাপা স্বভাবের। নিজের কষ্ট কখনোই প্রকাশ করে না। নিজের মধ্যে চেপে রাখে। পরিবারের সবাই যেন ভালো থাকে, সেই চেষ্টাই করে সবসময়।

তারকা হয়েও পরিবারের মানুষ

রেজিয়া বেগম বলেন, “তারকা হলেও সে পুরোপুরি পরিবারকেন্দ্রিক। শুটিং না থাকলে বাসাতেই সময় কাটায়। মা হিসেবে আমি যথেষ্ট সময় পাই। এখন তো আব্রাহাম ও শেহজাদ—দুই ছেলের সঙ্গেও সময় কাটায় অনেক।”

শাকিবের পছন্দের খাবার

মায়ের হাতের রান্না তার সবচেয়ে প্রিয়। “খিচুড়ি, মোরগ পোলাও, বিরিয়ানি—এসব খুব পছন্দ। জিম শুরু করার পর ডায়েট ফুডও শুধু মায়ের হাতেরটাই খেতে চায়,” বলেন রেজিয়া বেগম।

সিনেমার গর্ব ও প্রেক্ষাগৃহের অভিজ্ঞতা

রেজিয়া বেগম বলেন, “ওর প্রায় সব কাজই দেখার চেষ্টা করি। নতুন ছবি মুক্তি পেলে আত্মীয়স্বজন মিলে প্রেক্ষাগৃহে যাই। ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘দরদ’, ‘তুফান’, ‘বরবাদ’—সবই দেখেছি। রান্নার ফাঁকে বাসার সবাই মিলে সিনেমা দেখি।”

মা হিসেবে পরামর্শ ও স্বপ্ন

ছেলেকে ছোটবেলা থেকেই শিখিয়েছেন সৎভাবে চলতে, মানুষকে সাহায্য করতে। আজও সেই শিক্ষাই বহন করছে শাকিব। আর মায়ের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন? “ছেলের সব স্বপ্ন যেন পূরণ হয়, এই দোয়া করি সবসময়।”

ছেলের পরিচয়: নায়ক নয়, মানুষ হিসেবে কেমন?

“নায়ক হিসেবে সবাই চেনে, কিন্তু মা হিসেবে আমি জানি, সে ভীষণ অমায়িক, ভালো মনের মানুষ। তবে অন্যায় দেখলে রেগে যায়। পরিবার আর কাছের মানুষেরা এটা বোঝে,” বলেন রেজিয়া বেগম।

শাকিব খান আমাদের কাছে সুপারস্টার, কিং খান, মেগাস্টার। কিন্তু এক মায়ের চোখে তিনি শুধুই ‘মাসুদ’। এই ‘মাসুদ’ কতটা ভালোবাসায় গড়া, কতটা বিশ্বাস আর আত্মত্যাগে গড়া—রেজিয়া বেগমের এই প্রথম সাক্ষাৎকারে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button